হেলালী ফেরদৌসী, নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বসন্তপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনের পাশে গড়ে উঠা ইটভাটায় চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে পড়েছে স্কুলের কোমল-মতি শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ভাটার চিমনির ধোঁয়া, মাটি ও ইট নিয়ে আসা যাওয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের শব্দ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে বায়ু দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফলে স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে রয়েছে বসন্তপুর মাধ্যমিক স্কুলের কোমল-মতি শিক্ষার্থীরা ও স্থানীয় জনসাধারণ। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ১নং ত্রিবেণী ইউনিয়নের বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মিজানুর রহমান মধুর মালিকানাধীন এইচ.বি.আর ব্রিক্স বিদ্যালয় সংলগ্ন মধু ব্রিক্স নামে ইটভাটাতে পোড়ানো হচ্ছে কাঁচা ইট। ইট পোড়ানোর মৌসুমে সতর্ক থাকতে হয় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। হঠাৎ বাতাসে ভেসে আসে ধূলা-কালো-ধোঁয়া। আর তখনই স্কুলের জানালা-দরজা বন্ধ করে দিতে হয়। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন ভোগান্তিতে ফেলেছে আঙিনাতেই গড়ে ওঠা এক ইটের ভাটা। সমস্যা শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরই নয়, আশপাশের বসত বাড়িতে বসবাসরত মানুষদেরও সমস্যায় পড়তে হয় ভাটায় কাচাঁইট পোড়ানো শুরু হলে। শিক্ষকদের অভিযোগ, স্কুলের সীমানার খুব কাছেই গড়ে তোলা হয়েছে ভাটাটি। যেখানে মৌসুমে কাঠ পুড়িয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এই ভাটার কালো ধোঁয়া আর উড়ে আসা বালি বিদ্যালয় ভবনে প্রবেশ করে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে। এতে প্রায় সময় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।আর ভাটার পাশে বসবাসরত বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাটা চালু হলে ঘরবাড়িতে ধুলা-বালির স্তূপ পড়ে যায়। উঠান,বারান্দা,ঘরের ভেতর পর্যন্ত চলে যায় ধুলা-বালি। তাতে অসুবিধায় পড়তে হয় অনেক। এমনকি ধুলা-বালির কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু ও বৃদ্ধরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, বিশেষ কোন স্থাপনা, রেলপথ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং লোকালয় থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনও ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। এছাড়াও কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরির আইনগত বিধি নিষেধ থাকলেও কৃষিজমি, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থানে অ-পরিকল্পিতভাবে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মদনডাঙ্গা বাজার সংলগ্ন ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়ক ঘেঁষে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২’শ এর অধিক। জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটা। একই সাথে আরেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার নাম শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এলাকাবাসী বলেছেন, এক বছর আগে হঠাৎ ইটভাটার কাজ শুরু হয়। মিজানুর রহমান মধু নামের স্থানীয় একজন ভাটাটি প্রতিষ্ঠা করেন। ভাটাটি বিদ্যালয় ও বসতবাড়ীর পাশেই হওয়ায় বিদ্যালয়ে পাঠদান ও বাড়িতে বসবাস করা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। স্কুলের পাশে ইটভাটা থাকায় ধোঁয়া ও বালুর কারণে জীবন অতিষ্ঠ। স্কুলের ছেলে মেয়েরা ছোট তাই বালু ও ধোঁয়াতে তাদের মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া স্কুলের কোমল-মতি শিশুরা দিন দিন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।স্থানীয়রা এর প্রতিকার চান এবং ইটভাটাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। বিদ্যালয়ের সত্তম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে পড়ালেখা করে। বাতাস হলে চোখ মেলে চলাফেরা করতে পারে না ছাত্র-ছাত্রীরা। কালো ধোঁয়া এসে শ্রেণীকক্ষে গন্ধ ছড়ায়। তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রের অভিভাবকেরা বলেন, ইট পোড়ানো মৌসুম এলে বিদ্যালয়ে বাচ্চা পাঠিয়ে তাঁরা সারাক্ষণ চিন্তায় থাকেন কখন বাচ্চাটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিদ্যালয় এলাকায় গেলে পোড়ামাটির গন্ধ নাকে এসে লাগে। চোখ মেলে হাঁটাচলা করলে বালুকণা উড়ে এসে পড়ে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা কালো ধোঁয়ায়। দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়। ইটভাটার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হচ্ছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, ইটভাটা মালিক মিজানুর রহমান মধু জানান,আমি যথাযথ নিয়ম মেনেই ভাটা নির্মাণ করেছি। আমাদের সব কাগজপত্র রয়েছে। এখানে কারোর কোন অসুবিধা হচ্ছে না। আমার বিরুদ্ধে লেখালেখি করে আপনারা কিছুই করতে পারবেন না। ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি এখন পর্যন্ত কোনও প্রকার অভিযোগ দেয়নি। তবে অভিযোগ পেলে খোঁজ খবর নিয়ে ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে শৈলকূপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: বনি আমিন জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা থাকাটা দুঃখজনক। এতে করে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। অচিরেই অভিযান পরিচালনা করার জন্য আমরা ঝিনাইদহ জেলাতে একটি টিম পাঠাব।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।