All Menu

তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে তিল আবাদে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছে বিএআরআই

ডিজার হোসেন বাদশা, নিজস্ব প্রতিনিধি, পঞ্চগড়, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: বিদেশ থেকে বাংলাদেশে তেল আমদানির নির্ভরতা কমাতে এবং দেশে তেলের চাহিদা পূরণ করতে তিল ফসলের আবাদে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চাষিদের নিয়ে পালন করেছে মাঠ দিবস। আর এতে করে নানা জাতীয় ফসলের সাথে হারিয়ে যাওয়া এই তিল ফসল আবাদে চাষিরা এগিয়ে আসবে বলে মনে করছেন তারা। রবিবার (২৩ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) বিকেলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ঠাকুরগাঁও এর বাস্তবায়নে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের নহুলিয়া পাড়া গ্রামে প্রায় অর্ধশতাধিক চাষিদের নিয়ে এক মাঠ দিবসের মাধ্যমে তিল ফসল আবাদে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এদিকে তিল ফসল আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া চাষিরা বিএআরআই-এর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। জানা গেছে, বিগত দিনের তুলনায় পঞ্চগড়ে আবাদ কমলেও এবার সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের নহুলিয়া পাড়া গ্রামে নতুন করে আবাদ শুরু হয়েছে তিল ফসলের। নানা জাতের ফসলের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ঠাকুরগাঁও এর বাস্তবায়নে নহুলিয়া পাড়ায় চাষিরা এবার ২৫ বিঘা জমিতে আবাদ করছে তিল ফসল। এসময় মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চাষিদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন বিএআরআই-এর মহাপরিচালক ডঃ দেবাশীষ সরকার। পরে পার্টনার প্রকল্পের আওতায় রিসার্চার ম্যানেজ পাইলট প্রোডাকশন প্রোগ্রামের বাস্তবায়নে চাষিদের তিল আবাদ বৃদ্ধির বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করে উপস্থিত থাকা বিএআরআই-এর কর্মকর্তারা। পরে চাষিদের নিয়ে তিল ফসলের মাঠ পরিদর্শন করা হয়। একই সাথে ফসল নিয়ে আলোচনা করা হয়। মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ঠাকুরগাঁও এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নুরজামানের সঞ্চালনায় উপস্থিত থেকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) ঠাকুরগাঁও এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ডাঃ কামরুল ইসলাম, পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আব্দুল মতিন, ঠাকুরগাঁও বীজ বিপণন কেন্দ্র বিএসডিসি’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক আব্দুল জলিল। চাষিরা জানান, আগে তিলের প্রচুর আবাদ ছিল। সে সময় আবাদ শেষে ফসলটি বাজারে তোলা হলে দাম পাওয়া যেত না। এতে লোকসানে পড়তে হোত। তাই সবাই তিল ফসল আবাদ বাদ দিয়ে অন্য আবাদে ঝুঁকে। দেখতেছি বেশ কয়েকজন চাষি এবার তিল আবাদ করেছে। নহুলিয়া পাড়া গ্রামের চাষি আব্দুস সাত্তার ও এনামুল হক বলেন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে জানতে পারলাম বর্তমানে তিলের বাজার ভালো যাচ্ছে, একই সাথে আবাদও ভালো হচ্ছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে তারা এই ফসল আবাদের লাভবানের বিভিন্ন বিষয় আমাদের অবগত করেছে। ইনশাআল্লাহ এবার আমরাও তাদের নির্দেশনায় তিল আবাদ করবো। তারা আরো বলেন, আমরা ২৫ বিঘা জমিতে বেশ কয়েকজন মিলে এবার তিল আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করি ভালো দাম পাবো। একই সাথে মাঠ দিবসে তিল আবাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা পেয়ে আবারো এই ফসল আবাদ করবে বলে জানান অন্য উপস্থিত চাষিরা। এসময় কথা হয় ঠাকুরগাঁও এর বীজ বিপণন কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জলিলের সাথে। তিনি বলেন, দেশে তেলের চাহিদা পূরণসহ খাদ্যের পুষ্টি মান বৃদ্ধিতে সরিষার পাশাপাশি এই তিল ফসল বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করছি বাংলাদেশের সকল বিএডিসি কেন্দ্র গুলোতে এই তিলের বীজ আমরা সরবরাহ করতে পারবো। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ঠাকুরগাঁও এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ মো. কামরুল ইসলাম বলেন, সরকারের একটি উদ্যোগ রয়েছে তেল ফসল বৃদ্ধি করা। দেশে তেল আমদানি করতে হয়, এতে আমাদের প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। সেই লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ ধান বা অন্য ফসলকে বাদ দেয়া না, আমাদের লক্ষ অন্য ফসলের পাশাপাশি তিল ফসল আবাদ বৃদ্ধি করার। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে চাষিরা তিল আবাদে উদ্বুদ্ধ হবে এবং আবাদ বৃদ্ধিও পাবে। এ বিষয়ে পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আব্দুল মতিন বলেন, বর্তমানে আমাদের পঞ্চগড়ে ব্যাপক আকারে আলু চাষ হচ্ছে। এই আলুর পরে আমরা বারি তিল ৪, ৫, ৬ আবাদ বৃদ্ধি করায় পরিচিত করার চেষ্টা করছি। এবং চাষিদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করছি মাঠ দিবস ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে। যাতে করে এই তিলের মাধ্যমে যেন তারা আবার সাবেক সেই ঐতিহ্য ফিরে পায়। বর্তমানে মাঠে যে তিল হয়েছে, এই তিল দ্রুত হার্ভেস্ট করা যাবে। আশাকরি বর্ষা শুরুর আগেই এই তিল আমরা সুন্দর ভাবে নিতে পারবো। আরো আশা করছি চাষিরা এই তিলের আবাদ আরো ভালো ভাবে গ্রহণ করবে, এবং তিলের চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top