মোঃ আশরাফুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: আবারও বন্যা বাড়ছে, প্রতিবছরের মতই ভাঙ্গন আতংকে পদ্মা পাড়ের লোকজন। পাড় ভাঙ্গার ভয়ে আগেই পূর্ব সতর্কতায় ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। বার বার আশ্বাস দিলেও প্রতিবছরই ভাংছে পদ্মার পাড়, নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলী জমি, আম বাগান, বিভিন্ন স্থাপনা। পদ্মা বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলছে ধীর গতিতে। গত বছর ভাঙ্গনে অনেক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হলেও গত এক বছরে প্রকল্পের কাজ আশানুরুপভাবে এগোতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এর কারণ হিসেবে নানা কথাও বলছেন ঠিকাদার। তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন, সঠিক সময়ে এবং মানসম্মত-ভাবেই পদ্মা বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এবছর প্রকল্পের কাজ যে পরিমাণ হয়েছে, তাতেই ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় পদ্মার ভাঙন থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন পদ্মা তীরবর্তী গ্রামের মানুষ। গত কয়েকদিন থেকে উপজেলার দুর্লভপুরের মনোহরপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে পানি বাড়ায় আবাদি জমিসহ ওই এলাকার বাসিন্দাদের ভিটামাটিতে ভাঙন ধরেছে। মনোহপুরের কুপপাড়া মহল্লায় ভাঙন ধরেছে। ফলে এ এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার মুন্সিপাড়া, ড্যাইসা পাড়া, তারাপুর এলাকায় ঘর তুলেছেন। যথা সময়ে ভাঙন রোধ না করা গেলে তীব্র ভাঙনে মনোহপুরের ক্যাঠ্যাপাড়া মহল্লাটিও হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়াও সেখানকার শতশত বিঘা আবাদি-জমি, স্থাপনা, আর কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও হুমকির মুখে। মনোহপুরের কুপপাড়া মহল্লার সোহরাব আলী বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তিগুলো দিনে দিনে পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ এলাকায় ছাড়া আর আমার কোথাও জায়গা জমি নাই। কোথায় যাবো, কোথায় থাকব। পরের ধানি জমিতে ঘর তুলেছি। এ জমির মালিক এখন কিছু না বললেও, স্থায়ীভাবে তো আর জায়গা ছেড়ে দিবে না। ভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে বাড়ি ভেঙে মুন্সিপাড়ায় ঘর তুলেছেন তবজুল। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এ এলাকায় নদী ভাঙন নতুন কিছুই না। এর আগেও কয়েকবার ভাঙন থেকে বাঁচতে পূর্বের ভিটামাটি ছেড়ে এসেছি। আর কতবার এলাকা ছাড়লে, কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে। আর কত ভোগান্তি পোহাতে হবে। এমন চলতে থাকলে, জীবনে আর সুখে থাকা হবে না। মনোহপুরের বাসিন্দা শিমুল বলেন, নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধান না করলে এলাকায় অশান্তি। মনোহপুর এলাকা দিনদিন ছোট হচ্ছে। আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। এখন নদী ভাঙন না রুখলে হুমকি একটি মহল্লাসহ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়বে। পদ্মায় প্রায় ৩৫ কিলো মিটার জুড়ে নদী ভাঙন হয়। তার মধ্যে প্রায় ২৫ কিলো মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি আর প্রায় ১৩ কিলো মিটার জুড়ে বাঁধ নির্মাণ করলে নদী ভাঙন থেকে স্থায়িত্ব সমাধান পাবে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা। এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ওইসব নদী ভাঙন এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। প্রকল্পটি পাশ হলে, কাজ শুরু করা হবে এবং তাৎক্ষনিক ভাঙ্গন রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।