চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ বছর আগে জঙ্গি-বিরোধী অপারেশন ঈগল-হান্টে আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবুকে হত্যার ঘটনায় কাউন্টার টেরোরিজম, সোয়াট ও পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) সন্ধ্যায় আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন জেলার শিবগঞ্জ থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া। মামলার আসামি তালিকায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে পুলিশের সাবেক আইজি, ডিআইজিসহ বেশিরভাগই পুলিশ, সোয়াট ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্য। পাশাপাশি একজন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে। সুমাইয়া খাতুনের বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের ত্রিমোহী এলাকায়। ওই এলাকাতেই ২০১৭ সালে ২৬ ও ২৭ এপ্রিল অপারেশন ঈগল-হান্ট পরিচালনা করা হয়। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করে দুইদিনের অপারেশন ঈগল-হান্টে নিহত হন চার ‘জঙ্গি’। তাদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবু একজন। থানায় দেয়া অভিযোগে সুমাইয়া খাতুন উল্লেখ করেছেন, তার স্বামী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ জন্য বিভিন্ন সময়ের তাদের হুমকি দেয়া হতো। ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল ট্রাক ও পিক-আপে করে ৫০/৬০ জন পুলিশ, সোয়াট, কাউন্টার টেরোরিজম সদস্য ও নবাবগঞ্জ পুলিশসহ বিভিন্ন ধরণের পোশাক পরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা তার ভাড়া বাড়ির আশেপাশে অবস্থান নেন। রাত আনুমানিক ২ টার দিকে বাইরে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। গোলাগুলির শব্দে তিনি এবং তার স্বামী আবু বাড়ির দরজা খুলে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাইরে থেকে ঘরের দরজায় তালা দেয়া ছিল। চারদিক থেকে আমার ভাড়া বাড়ির ওপরে গুলিবর্ষণ শুরু করে। একইভাবে পরদিনও (২৭ এপ্রিল) গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের গুলিতে তার স্বামী মারা যান। তিনিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তিনি জানতে পারেন ২৭ এপ্রিল হেলিকপ্টার থেকে তিন জনের বস্তাবন্দী মরদেহ ফেলা হয় তার বাড়িতে। পরে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে, অপারেশন ঈগল-হান্টের অন্যতম সদস্য সোয়াট টিমের এস আই সাব্বির আলম চৌধুরীকে। এ ছাড়াও আসামি করা হয়েছে, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম খান, পুলিশের সাবেক আইজি এ কে এম শহিদুল হক, ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম রব্বানী, তার ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ শিশিরকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া বলেন, আসামি তালিকায় যেহেতু সরকারি কর্মকর্তারা (পুলিশ কর্মকর্তা) রয়েছেন সেহেতু কিছু বিধি অনুসরণ করা হবে এই অভিযোগের ক্ষেত্রে। অভিযোগের তদন্ত শেষে এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেশ কয়েকটি এমন অভিযান হয়েছে। এসব ঘটনায় সরকারের একটা অবস্থানও রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।