ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ১০০ কর্ম-দিবসের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনার ৭৮ ভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, বন, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঘোষিত ২৮টি অগ্রাধিকারের মধ্যে ২২টি পুরোপুরি এবং ৪টির আংশিক বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আংশিক বাস্তবায়ন বিবেচনায় নেয়া হলে বাস্তবায়নের হার হবে ৮৫ শতাংশ। উদ্যোগ গ্রহণ করা সত্ত্বেও ২টি অগ্রাধিকার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, বাস্তবায়নের কাজ চলমান আছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয় ঘোষিত ১০০ কর্ম-দিবসের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিষয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং এসকল তথ্য জানান পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। মন্ত্রী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর ও সংস্থার অর্গানোগ্রাম (জনবল কাঠামো) হালনাগাদের বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্যকর পরিবীক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সাবের চৌধুরী বলেন, কিছু পদ্ধতিগত বিষয়ের জন্য অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বায়ু দূষণের প্রতিটি উৎস থেকে সৃষ্ট দূষণ মোকাবিলায় ন্যূনতম একটি করে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বায়ু দূষণ রোধে দেশব্যাপী ন্যূনতম ৫শ’ ৮১টি ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ হালনাগাদ-করণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘ন্যাশনাল সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক’ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্লাস্টিক দূষণ হতে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ এর তালিকা প্রণয়ন এবং প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পণ্য প্রস্তুতকারক ও আমদানি-কারকদের পণ্য হতে সৃষ্ট বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ‘এক্সটেন্ডেড প্রডিউসার রেসপন্সিবিলিটি’ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিল্প কারখানার ইটিপি কার্যকর-ভাবে চালু রাখতে স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইন মনিটরিং চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সচিবালয়ে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ ফ্রি ঘোষণার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ হতে সকল মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পরিবেশ-দূষণ রোধে প্রতি বিভাগ দুটি করে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ ফ্রি স্কুল ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ, বন, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কোমল-মতি শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্কুল-কলেজের সিলেবাস/পাঠ্যবইকে সবুজায়নের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত পাহাড়, টিলা ও প্রাকৃতিক জলাধারে ম্যাপিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সবুজ ক্যাটেগরি-ভুক্ত ছাড়পত্র ‘সেলফ অ্যাসেসমেন্ট’ এর আওতায় আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের কার্যক্রমের ব্যাপ্তি ও সৃষ্ট সম্ভাব্য দূষণের পরিধি, মাত্রা এবং পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের ওপর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের ক্যাটেগরি হালনাগাদ-করণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জবর-দখলকৃত ৫১ হাজার ৭ একর বনভূমির উচ্ছেদ প্রস্তাব প্রস্তুতকরণ এবং জেলা প্রশাসনের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে প্রেরিত ১ লাখ ৮৭ হাজার একর জবর-দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারের প্রস্তাব বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ দূষণকারী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের পুন-নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিবেশ, বন, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উচ্চ আদালতের রায় যথাযথ বাস্তবায়নে পরিবীক্ষণ সুসংহত করতে অনলাইন কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। সাবের চৌধুরী বলেন, অর্থবহ ও কার্যকর সহযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশ ও জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক এপ্রিল ২০২৪ এ ঢাকায় ন্যাপ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় প্রস্তাবিত প্রস্তাবসমূহ যাচাই-বাছাইয়ের নিমিত্ত গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ‘লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড’ হতে অর্থায়ন প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও এবং সিএসও-দের নিয়ে একটি ‘পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক’ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ‘ হোল অভ্ গভর্নমেন্ট’ এবং ‘হোল অভ্ সোসাইটি’ এপ্রোচ বাস্তবায়নে কাজ চলমান আছে। বাজেটে ‘ক্লিন এন্ড গ্রিন’ থিম অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছিলো, আগামী অর্থবছরেও এ উদ্যোগ নেয়া হবে। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি জমি রক্ষার্থে সরকারি নির্মাণে একশত ভাগ ব্লক ব্যবহারে সংশোধিত রোডম্যাপ অনুমোদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু চূড়ান্ত করা যায়নি। ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কর্মকৌশলের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, চূড়ান্ত করার কাজ চলমান আছে। ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ উৎপাদন ও ব্যবহার হ্রাসে খসড়া কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও চূড়ান্ত করা যায়নি। উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি বিভাগে দু’টো জিরো ওয়েস্ট ভিলেজ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, ড. ফাহমিদা খানম ও তপন কুমার বিশ্বাস, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ এবং বন অধিদপ্তরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়-সহ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।