ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্মুদ বলেছেন, বাংলাদেশের স্বার্থে ও স্বার্থ সংরক্ষণ করেই ভারতের সাথে নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও পুরনো সমঝোতা স্মারক নবায়ন করেছে সরকার। বুধবার (২৬ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত ভারত সফর নিয়ে বিএনপির বিরূপ মন্তব্য বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের পার্থক্য না বুঝে, না পড়েই মন্তব্য করছেন। কারণে-অকারণে সরকারের বিরোধিতা করাই তাদের কাজ। ভারতের সাথে সম্পর্ককে পারস্পরিক মর্যাদাপূর্ণ বলে অভিহিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর প্রথম সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ভারত আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত যেভাবে সহায়তা করেছে, তাদের সৈনিকরা যেভাবে জীবন দিয়েছে, আমাদের প্রায় এক কোটি মানুষকে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে, তাতে তাদের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক, তা অবিচ্ছেদ্য।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো, তারা প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে পারেনি। বিএনপিনেত্রী বেগম জিয়া নিজেই বলেছেন যে তিনি ভারতে গিয়ে গঙ্গা চুক্তির কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন আর ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঙ্গা চুক্তি করেছেন বিধায় আমরা পানি পাচ্ছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দু’দেশের সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে, তার ফলেই আমরা নেপাল থেকে ভারতের ওপর দিয়ে ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে পারছি, ভুটানের সাথেও এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। সম্পর্কের কারণেই এ বছর কুরবানির আগে ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। এ সময় ভারতের সাথে ‘কানেক্টিভিটি’ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ঢাকা-কলকাতা, খুলনা-কলকাতা রেল যোগাযোগ বিদ্যমান। ভারতের পাশাপাশি নেপাল, ভুটানসহ আঞ্চলিক রেল ও সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে কাজ চলছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর সাথে ভারতের নানা অঞ্চলের যোগাযোগ বহুদিন ধরে। ১৯৬৫ সালের পরে অনেক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলো আবার চালু করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সুইডেনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে (Alexandra Berg von Linde)। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশে অবস্থানকালে রাষ্ট্রদূতের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন । রাষ্ট্রদূতও তার এ সময়কালকে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ ও ফলপ্রসূ বলে বর্ণনা করেন। বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, প্রযুক্তি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোকপাত করেন তারা। বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতিদানকারী ইউরোপের দেশগুলোর অন্যতম সুইডেনের প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠান দেশে অপারেট করছে। কাপ্তাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১৯৬০ দশকের শুরু থেকে এবং সুইডিশ এনজিও সিডা বহুবছর ধরে এ দেশে কাজ করছে। আমরা তাদেরকে ‘বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন’ এবং তথ্যপ্রযুক্তিসহ নানা খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সমন্বয় সভা
আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘সিনিয়র অফিশিয়ালস মিটিং’য়ে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ।
মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন পরিচালিত এ সভায় কূটনৈতিক ও দাপ্তরিক বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন মন্ত্রী। অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. নজরুল ইসলাম ও সকল উইংয়ের মহাপরিচালকবৃন্দ সভায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত ভারত সফর উত্তর কার্যক্রম, চীনে আসন্ন দ্বিপাক্ষিক সফরের প্রস্তুতিসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের সাথে সুসমন্বয়, দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম তদারকি, প্রবাসী সেবার মানবৃদ্ধি, মিশনগুলোর ট্রেড টার্গেট বাস্তবায়ন ও কার্যক্রম ইনস্পেকটর জেনারেল অভ্ মিশনসে’র মাধ্যমে পরিদর্শনসহ মন্ত্রণালয় ও এর মিশনসমূহের নানা কার্যক্রমের ওপর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন মন্ত্রী ড. হাছান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।