ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছ :
“প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৪’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও অদূরদর্শী কর্মকাণ্ডের বিরূপ প্রভাবে সৃষ্ট পরিবেশ ও প্রতিবেশগত অবক্ষয় রোধ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ দিবসটির পালন তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
পৃথিবীতে এখন আটশত কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করছে। সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে এ বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে ভূমির ব্যবহার। ভূমি সম্পদের অপরিমিত ও অপরিণামদর্শী ব্যবহারের ফলে বিশ্ব জুড়ে ভূমির অবক্ষয় তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে United Nations Convention to Combat Desertification (UNCCD) বিশ্বব্যাপী টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ২০৩০ সালের মধ্যে Land Degradation Neutrality (LDN) অর্জনের রূপরেখা প্রদান করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ভূমি অবক্ষয় নিরপেক্ষতা বা LDN অর্জন করা সম্ভব না হলে ২০৪৫ সালের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী ১৩৫ মিলিয়ন মানুষ খরার কারণে উদ্বাস্তু হতে পারে। অপরদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর অভিঘাত আমাদের জন্য চরম বাস্তবতা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী মরুময়তা ও খরার প্রবণতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে, যার কারণে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কাজেই, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এবছরের প্রতিপাদ্য- ‘Land restoration, desertification and drought resilience’ অর্থাৎ ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।
আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রাকৃতিক সম্পদের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। বিশ্বময় ভূমির অবক্ষয় রোধ, মরুকরণ ও খরার প্রভাব প্রশমনের লক্ষ্যে আমরা জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে একযোগে কাজ করে যাচ্ছি। UNCCD-তে বাংলাদেশ নিয়মিতভাবে এ সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন রিপোর্ট দাখিল করে যাচ্ছে। আমরা জাতীয় পর্যায়ে ‘Bangladesh National Action Program (NAP) to Combat Desertification, Land Degradation and Drought 2015-2024’ প্রণয়ন করেছি। জাতীয় পরিবেশনীতি ২০১৮ প্রণয়ন এবং এটি বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সাথে আমরা UNCCD এবং NAP এর সাথে সমন্বয় করে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকল্পে ২০৩০ সালের মধ্যে ভূমি অবক্ষয় নিরপেক্ষতা (LDN) অর্জনের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।
সমন্বিতভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলার অংশ হিসেবে আমাদের সরকার ইতোমধ্যে National Adaptation Plan 2023-50, Updated Nationally Determined Contribution (NDC) 2021 এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য ‘Mujib Climate Prosperity Plan 2022-41’ গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে প্রথমবারের মত UNFCCC এর সহায়তায় বিশ্বের ১০৪টি দেশের অংশগ্রহণে NAP EXPO BANGLADESH 2024 সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে ভূমি অভিযোজন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষা আমার দশটি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম। টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসস্থান ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মরুকরণ ও খরার প্রবণতা হ্রাসে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করাই হোক বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।
আমি আশা করি, বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রতিবেশের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা আরো বৃদ্ধি পাবে।
আমি ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৪’ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।