ব্যক্তি-মাত্রই পছন্দ-অপছন্দের স্বাধীনতা থাকা উচিত। যেখানে দ্বৈত স্বার্থ সেখানে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসা যায়। সঙ্গী বলে তার ওপর নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। সম্পর্কে অধিগ্রহণ চলে না। অথচ মানুষ সুখের লোভ দেখিয়ে স্বাধীনতা কেড়ে লয়। পরিণামে লাভ হয় নাকি ক্ষতি হয় তা দু’জন দু’মুখো হলেই বোঝা যায়। নারী হোক কিংবা পুরুষ-কেউ তার অংশীজনের মতামতকে অগ্রাহ্য করার মানবিক ক্ষমতা ও মানসিক দৃঢ়তা রাখে না। অমানবিকতার কোন ধর্ম নাই কিন্তু কেউ যদি দায়িত্ববান হয় তবে মত ও মন্তব্যের স্বাধীনতা, ইচ্ছা ও অনিচ্ছার মূল্য এবং পছন্দ ও অপছন্দের অগ্রাধিকার দিতেই হবে।
সঙ্গী/সঙ্গিনীকে ডমিনিটিং করার যে প্রবণতা সেটা ত্যাগ করতে না পারলে সুস্থ সম্পর্ক, মানসিক সম্মান এবং অপ্রকাশ্য বিশ্বাস লাভ করা যায় না। পুরুষ বলে সে তার সাথীর ওপর সকল ইচ্ছা-অনিচ্ছা বিবেচনাহীন চাপিয়ে দেবে এবং সাথীও সেটা অন্ধমতে মানতে বাধ্য হবে সেই সুযোগ এই আলোতে নাই। কেউ যদি এমনটা করেও থাকে তবে তারা ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে দূরে নয়। আবার কোন রমণী যদি তার পছন্দ-অপছন্দের জেদ পুরুষের ঘাড়ে স্বেচ্ছায় বাধ্যতামূলকভাবে তুলে দেয় তবে কলহের ভয়ে পুরুষ সেটা মেনে যেতেও পারে তবে দুর্দিনের দুর্দশা অল্প দূরেই হাতছানি দিয়ে ডাকছে!
যৌথ চলায় পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দরকার। শান্তির জন্য দরকার সন্ধি। কাউকে বন্দি করে বয়ান লওয়া যায় কিন্তু ভালোবাসা পাওয়া যায় না। ভালোবাসা, সম্মান এবং বিশ্বাস আদায় করার বস্তু নয় বরং লাভ করতে হয়। পরস্পর পরস্পরের রুচি না বুঝলে, মতামতকে সম্মান না জানালে, বিশ্বাসে নিবিষ্ট না থাকলে সেখানে সুখ ধরা দেয় না। সব যদি জেদ দিয়ে পেতে হয়, সব যদি বাধ্য করে করাতে হয় তবে প্রেম কোথায়? কখনো কখনো সামর্থ্য-সক্ষমতার ওজন বুঝতে হবে। কখনো কখনো উদাস চোখের ভাষাও পড়তে হবে। অল্প অল্প গল্পে যে সুখের বীজ দানা বাঁধে সেগুলোকে পরম যত্নে লালন করতে হবে। মনের জমিনে জোর-জবরদস্তি করে যা হয় না তা কোমল ভাষায় হয়। তার অধিক হয় চোখের ইশারায় যদি সম্পর্কে মায়া থাকে ! ভরসার সেতু শক্ত হলে, বিশ্বাসের মূল পোক্ত হলে সে তরীর তক্তা নুড়ির আঘাতে ফুটো হয় না। উত্তাল ঢেউতেও ডোবাতে পারে না। জীবন থেকে জীবনকে আলাদা করতে পারে না কিছুতে; মৃত্যু ছাড়া!
যে দম্পতির ঘরে সুখ নাই, সমাজে তাদের ঘাড়ে মাথা থাকা কিংবা না থাকায় অশান্ত অবস্থানের খুব বেশি রদবদল হয় না। সম্পর্কে যদি গোয়েন্দাগিরি থাকে, আল্টিমেটাম দিয়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছা পূরণ করতে হয়, মান-অভিমানের চেয়ে যদি রাগ-ক্ষোভ বেশি ছড়িয়ে যায় তবে এসব আলামত সম্পর্কের জন্য ক্যান্সারের মত। পচনের শুরুতে যদি সংক্রমণ ঠেকানো না যায় তবে দূরত্ব আটকানো যায় না। দৈহিক দূরত্বের চেয়ে মনের দূরত্ব সাংঘাতিক হানিকর। সম্পর্ক যদি হৃদ্যতার না হয়, পারস্পরিক আস্থার ওপর নির্ভরশীল না থাকে তবে ঘরে ঘরে আগুন লাগে। ফাগুনে ফাগুনে মনের আগুন দ্বিগুণ করে। তখন জীবনটা দীর্ঘশ্বাসের শেষ বিন্দুতে দাঁড়ায়। অথচ কোন সম্পর্কে এমন পরিণতি হওয়ার কথা ছিল না!
দু’জনার সম্পর্কে তৃতীয় অপশক্তি মাথাচাড়া দিলে, হোক সেটা ঘরের কিংবা পরের, তবেই দুঃখের দিন ঘনাতে শুরু করে। অবহেলা সহ্য করা যদি কারো অভ্যাসে পরিণত হয় এবং উপেক্ষা করতে পারা যদি কারো নিয়মিত রুটিনে দাঁড়ায় তবে সেখানে ক্ষতের গর্ত সাগর সৃষ্টি করতে পারে। দু’জনের ভালোবাসার ভিত্তি মজবুত হয় আশ্বাসে। দু’জন দু’জনার জন্য অপেক্ষা করে বিশ্বাসে। সেখানে অবহেলা প্রতিবন্ধকতা হলে, আধিপত্যের মানসিকতা মাথা তুললে তবেই সুন্দর মুহূর্তগুলো অবেলায় এবং অবেলায় হারিয়ে যায়। দাম্পত্য যত মধুর হবে সন্তান সেখানে তত মধু পাবে। যা সবাইকে সুন্দর আগামীর কাছে পৌঁছে দেবে। প্রতিশ্রুতি ভুলে গেলে শয়তান কোলে চড়ে! হুমকি দিয়ে নয় বরং ভালোবেসে ভালোবাসা পেলে সেটা আগামীর জন্য সুখের আগমনী বার্তা শোনাবে।
রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।