ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ বলেছেন, কাঁচা পাট ও পাট পণ্য রপ্তানি করে ৩-৪% বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, যার মূল্যমান ১.২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। দেশের জিডিপি-তে পাট খাতের অবদান ১.৪% এবং কৃষি জিডিপি-তে পাট খাতের অবদান ২৬.২৬%। বিশ্বে আঁশ উৎপাদনে তুলার পরই ২য় গুরুত্বপূর্ণ আঁশ হিসেবে পাটের অবস্থান। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) বিকালে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিজেআরআই) এর প্রধান কার্যালয়ে “বিজেআরআই এবং জেনোম গবেষণা কেন্দ্রের সাফল্য ও সম্ভাবনা” বিষয়ক একটি সেমিনারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এই সেমিনারে উপস্থিত থেকে বিজেআরআই এবং জেনোম গবেষণার অগ্রগতি সম্পর্কে, বিশেষ করে বিজেআরআই-এর বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ৫৬ টি উচ্চ ফলনশীল পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসলের জাত এবং ২২৩ টি বিজেআরআই এর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পেরে আমি আনন্দিত। তিনি বলেন, “পাটের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য সম্প্রতি বর্তমান সরকার পাটকে ‘কৃষি পণ্য’ হিসাবে ঘোষণা করেছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাট ও পাট পণ্যকে ‘বর্ষ-পণ্য ২০২৩’ হিসাবে ঘোষণা করেছেন।” বিশ্বে আঁশ উৎপাদনে তুলার পরই ২য় গুরুত্বপূর্ণ আঁশ হিসেবে পাটের অবস্থান। বিশ্বে পাট উৎপাদনে এবং পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশের পাট ১ম অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের ৪০-৫০ লাখ কৃষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট উৎপাদনের সাথে জড়িত। ২০১০ এবং তার পরবর্তী সালে ৭-৮ লাখ হেক্টর জমিতে ১৪.৫-১৬.২ লাখ টন পাট ও পাট জাতীয় আঁশ উৎপন্ন হয়। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৭.৪৫ লাখ হেক্টর জমিতে ১৫.০২ লাখ টন পাট উৎপন্ন হয়। পাট বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলমের প্রশংসা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পাট গবেষণার বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক মানের জিনম সিকোয়েন্সিং করছেন।
তিনি আরো বলেন “সার্বিকভাবে কৃষিই হলো খাদ্য-নিরাপত্তা থেকে শুরু করে শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের সবচেয়ে শক্তিশালী উৎসস্থল। কৃষিপণ্য হিসেবে পাট বিশ্বে ২৮২ ধরণের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। পাট খাতের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৭২ শতাংশ এখন বাংলাদেশের দখলে।” সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াসমিন। উক্ত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ড. মোঃ আবদুল আউয়াল। সভাপতির বক্তব্যে বিজেআরআই এর মহাপরিচালক বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ এ অঙ্গীকার করেছেন ‘পরিবশেবান্ধব বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এই সুযোগ নেওয়ার জন্য পাট-পণ্যে বৈচিত্র্য আনা হবে এবং পাটশিল্পকে লাভজনক করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। পাটশিল্পে বেসরকারি খাতের উদ্যোগ উৎসাহিত করা হবে’। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট বদ্ধপরিকর।” “এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ২০২৩-২৪ এ পাটের জাত উন্নয়ন ও অন্যান্য কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ে ১৭৩ টি এবং পাটের বহুমুখী পণ্য ও শিল্প প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ে ৫৪ টি গবেষণা পরীক্ষণ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়ে (২০০৯ সাল হতে অদ্যাবধি) বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট মোট ১৬টি জাত (দেশী পাট ৬টি, তোষা পাট ৪টি কেনাফ ৩টি এবং মেস্তা ৩টি), ৭৩টি কৃষি প্রযুক্তি এবং ৩৫টি শিল্প ও কারিগরি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে,” বলেন ড. আউয়াল।
জেনোম গবেষণার কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে আগত অতিথিদের অবহিত এবং গবেষণা কেন্দ্রটির ল্যাবরেটরি পরিদর্শন করান জেনোম গবেষণা দপ্তর এর গবেষণা সমন্বয়কারী ড. কাজী মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন। বিজেআরআই এর গবেষণা কার্যক্রমের সাফল্য ও সম্ভাবনা সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন বিজেআরআই এর প্রশাসন ও অর্থ উইং এর পরিচালক ড. এস. এম. মাহবুব আলী। জেনোম গবেষণার কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে ড. মোছাদ্দেক জানান, পাটের জিনোম তথ্য উন্মোচনের পর পরই বিভিন্ন আধুনিক প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহার করে জিনোম তথ্যকে কাজে লাগিয়ে কৃষকের মাঠে আবাদের জন্য বিজেআরআই তোষাপাট ৮ (রবি-১) নামক উচ্চ ফলনশীল জাত ২০১৯ সালে অবমুক্ত করা হয়েছে যা প্রচলিত জাতের চেয়ে শতকরা ১৫-২০ ভাগ ফলন বেশী। তাছাড়া শশী-১ ও শশী-২ নামক দেশী পাটের দুটি অগ্রবর্তী সারি উদ্ভাবিত হয়েছে। শশী-১ লাইনটি ধবধবে সাদা আশ বিশিষ্ট এবং শশী-২ লাইনটি স্বল্প জীবনকাল (৮০-৮৫ দিন) বিশিষ্ট। পাট, ছত্রাক ও ধইঞ্চার জিনোম সিকুয়েন্স সম্পন্ন করার পর প্রাপ্ত তথ্য থেকে প্রায়োগিক গবেষণায় ব্যবহারের জন্য ট্রান্সক্রিপটোম সিকুয়েন্সের কাজও চলমান আছে। ইতোমধ্যে, দেশী ও তোষা পাটের ১২ টি করে ২৪ টি, ম্যাক্রোফমিনা ফেসিওলিনার ০২ টি এবং ধইঞ্চার ০৪ টি সহ মোট ৩০ টি ট্রান্সক্রিমটোম সিকুয়েন্স সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বল্প পানিতে দ্রুততম সময়ে পাট পচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে পাটের জাগ হতে সিকুয়োন্সিং এর মাধ্যমে ৪৫১ টি ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করা হয়েছে। উক্ত ব্যাকটেরিয়ার কম্বিনেশন ব্যবহার করে ইতোমধ্যে ল্যাব ও গ্রিনহাউজে ১৫ কেজি পাট ১২ দিনে পচানো সম্ভব হয়েছে। কৃষক-পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহারের উক্ত প্রযুক্তিটিকে আরও অধিকতর উপযোগী করতে গবেষণা চলমান রয়েছে। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন বিজেআরআই এর কারিগরি উইং এর পরিচালক ইঞ্জিঃ মোঃ মোসলেম উদ্দিন, জুট টেক্সটাইল উইং এর পরিচালক ড. ফেরদৌস আরা দিলরুবা, কৃষি উইং এর পরিচালক ড. নার্গীস আক্তার, পিটিসি উইং এর পরিচালক ড. মাহমুদ আল হোসেন বিজেআরআই এর সকল সকল স্তরের বিজ্ঞানী এবং কর্মকর্তাবৃন্দ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।