একটা অন্যরকম সময় পার করছি! কেউ বেশি নীতি কথা বললে, কিছু ভালো কাজ করলে তাকেও সন্দেহ হতে শুরু করে! কেননা অতীতের প্রতিশ্রুতি যারা ভেঙেছে, সে সংখ্যাটাই সমাজে বেশি! যেহেতু বর্তমানে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের বিচার করতে পারি না সেহেতু আজকের ভবিষ্যৎ যখন আগামী-দিনের অতীত হবে তখন দেনাপাওনার কতোখানি হিসাব মিলবে এবং কতটুকু বাকি থাকবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অতীতের দিকে তাকালে হতাশ হতে হয়! ভবিষ্যৎ যে আশা দেখায় সেখানে ভাসা ভাসা যে-সব আলামত তাতে কেয়ামতের আলামত বেশি!
কত মানুষ কতভাবে আশ্বাস দিয়েছে অথচ রেখেছ ক’জন সে হিসাব সুজন রাখেনি! দুর্জনেরা ঠকানোর জন্য মনে রাখে! তারা আঘাত করার সুযোগ খোঁজে! আশার বাণী সময়ের সাথে ফিকে হয়ে আসে! কথা রাখোনি কেন?-এসবের কৈফিয়তের রুচি থাকে না! সূচিত হয় এড়িয়ে চলা! যে আশাহত করেছে, বিশ্বাস ভেঙেছে, ভরসা ডুবিয়েছে তাকে মনে রাখার ঠেকা পড়েছে কার? মনের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায় কত রথী-মহারথী! মানুষ তাকেই মনে রাখে যে আপন হতে পারে, আপন বানাতে পারে! যে ঠেলেছে দূরে, বিকিয়েছে ব্যথা তারে মনে রাখবার, সম্মান করবার-কার এতো ফাও সময় আছে?
এই যে নীতিবান, এই যে স্বপ্ন বিক্রেতারা বাজার দখল করেছে তাতে কোন পক্ষ বেশি লাভবান? বিক্রেতা নাকি ক্রেতা? স্বার্থের ভাগ তো বুর্জোয়াদের হাড়িতেই বেশি চেপেছ! মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে স্বার্থ উদ্ধার করা যায়, মানুষকে বোকা বানানো যায়, জনতাকে ধোঁকা দেয়া যায় কিন্তু মোহের ঘোরে আটকে রাখা যায়? হুঁশ ফিরলে পাল্টা আগাতে ঠগিদের বেহুশ করে দেবে! আজকাল মানুষ প্রতিশ্রুতি এবং প্রলোভনের ধাঁচ বুঝতে পারে! বাজারি কথাবার্তার ঝাঁজ সমালাতে পারে! উল্টে দে মা লুটেপুটে খাই-এ নীতি বহু জায়গায় রীতির ধারাবাহিকতা হারিয়েছে!
ধোঁকা খেলে সেটা সামলে উঠতে সময় লাগে কিন্তু বোঝার পরে লাথি মারতে খুব কম সময় লাগে! আজকাল মানুষ বুক দেখানোর চেয়ো পিঠ দেখায় বেশি! মানুষ জানে কার নীতিকথায় ভেজালের চেয়ে তোষামোদি বেশি! কোথায় কোথায় কায়দা করে ফায়দা লুটবার মহাকরণ লেগেছে! কে কার পিছে হেঁটেছে, কে কি পেয়েছে, কে কতোখানি খেয়েছে-সে হিসাব চাটারা ভুলে যেতে পারে কিন্তু উজান বেয়ে যারা ভাটার দেশ থেকে আসে, তারা কি করে ভোলে? কার কপাল কীভাবে খোলে-সেটা সময় এলেই বলে! ভণ্ডামির ভান্ডোহীন নীতিকথা, লোক দেখানো ভালো কাজে সাময়িকভাবে মানুষকে তৃপ্ত করা যায় কিন্তু মানুষকে চিরায়ত কলেবরে মুগ্ধ করতে অন্তর-বাহির এক রাখতে হয়!
প্রশ্ন, অতীতের হিসাব বরাবর! আজকের আমি’র দ্বারাই ভবিষ্যতের আমি বিচার হবো! যে সুনাম আমার সেটা অবলম্বন করে ওয়ারিশ, প্রজন্ম, শিক্ষার্থী এবং সমাজ আমাকে মনে রাখবে! আজই রাষ্ট্র জানুক, এককালে আমি ছিলাম, শূন্যে! কাকে কি কথা দিচ্ছি, আমার ক্ষমতা-অক্ষমতা কতোখানি সে খোঁজ রোজ রেখেই পথে চলাচল করতে হবে! নীতির ওপর অবিচল না থাকা গেলে, অন্তত নিজেকে নীতি-রীতির খাঁচায় ধরাধরি করা না গেলে সব হিসাব মিছে! আজকের যে আমি দ্বারাই আমার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে, যে পরিচয়ে আমার নীতি-বোধ, প্রতিশ্রুতি সুরক্ষিত হোক! বলার জন্য বলা, স্বার্থের জন্য লোক দেখানো-এসব ভালো কাজের পর্যায়ভুক্ত না!
রাজু আহমেদ।
কলাম লেখক!
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।