কোন সংসারে অভাব-অভিযোগ, অবহেলা-অনুযোগ কিংবা অভিমান-আফসোস নাই? এগুলোকে সাগরে ফেলবেন? তবে সাগরের পানি রাখবেন কই? ছোট ছোট সমস্যা সবখানেই আছে। সমস্যার ধরণগুলো ভিন্ন হতে পারে কিন্তু ক্ষতের ব্যথা অভিন্ন। সকল সীমাবদ্ধতাকে আন্তরিকতা দিয়ে বদলে দেয়ার ইচ্ছাটুকুন থাকতে হয়। হাসিমুখ অনেক অভাবের দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। অনেক অপ্রাপ্তি-আফসোস ঘুচিয়ে দেয়।
ভুল স্বীকার করেই অনেক কড়া কড়া অভিযোগের দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সব ব্যস্ততা এড়িয়ে একটু সময় মুখোমুখি কাটালে, দু’টো শখ পূরণ করলে, কোন উপলক্ষে একটুখানি বিস্মিত করলে, তবেই অবহেলার দায় মুছে যাবে। একটু কেয়ার করলে, জোছনায় কবিতা পড়লে, ভালোবেসে দু’টো ফুল খোঁপায় গুঁজলে আর কতদিন অনুযোগ বেঁচে থাকে?
রাগ করার মাঝে, শাসানো-ধমকানোর মধ্যে আলাদা কোন বাহাদুরি আছে? ভালোবেসে যা আদায় করা যায় সেখানে হুমকি-ধমকি, আল্টিমেটাম কেন দিতে হবে? চোর-পুলিশের সম্পর্কে শাসন মানায় কিন্তু যে সম্পর্কের ভিত ভালোবাসা, যে সম্পর্কের দেয়াল ভরসা, যে সম্পর্কের ছাদ বিশ্বাস, সেখানে হাতুড়ি-পেটায় সুখ আনে না। ভালোবাসা পেতে হলে ভালোবাসতেই হবে। মানুষের ক্ষেত্রে অন্তত এ রীতির বিরুদ্ধে যাওয়া ঠিক নয়; বুনো ষাঁড় পোষ মানানোর প্রশ্ন এলে ভিন্ন কথা!
ক্ষতির গতি অন্তর্ভেদী! সেক্রিফাইসের মনোভাব না থাকলে, আগলে রাখার ইচ্ছা না জাগলে তবে দুঃখ ঝাঁকিয়ে আসবে। যে সম্পর্ক দু’জনার সেখানে একজনকে দুঃখ দিয়ে আরেকজন সুখে থাকতে পারে-সে বিশ্বাস পাগলের। একসাথে বাঁচা-মরার শপথের দিন থেকে আলাদা কিছু থাকে না; থাকা উচিত নয়। যে সম্পর্ক প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতার নয় সে সম্পর্কে একজন একা একা ভালো থাকার চেষ্টা করবে-এমন আচরণ নিন্দনীয়!
মনের মত পান নি-যতবার উচ্চারণ করবেন, ভাবনায় রাখবেন, ততবেশি নিজেই নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণ হবেন। এসব করতে বারণ করি। যা আপনার জীবনের সাথে মিশেছে, যা আজীবনের জন্য আপনার হয়ে গেছে সেটার ওপর ঘৃণা থাকলেও তা ভালোবাসায় বদলে নিন, অপছন্দের হলে তা পছন্দে পাল্টে দিন। আফসোস করে করে সুন্দর সময়গুলোকে খাঁচা-বন্দি করবেন না। যার আশায় ছিলেন, যা পাওয়ার লোভে ছিলেন সেটা পেলে-এলে আরও বেশি অসুখে জড়াতে পারতেন। কখনো কখনো না পাওয়ার মধ্যেও পাওয়ার থেকে বেশি কল্যাণ থাকে। কাজেই জীবনকে উপভোগ্য করুন।
অল্পে তুষ্টরা জীবনের দুষ্টচক্রে জড়ায় হয়। আকাঙ্ক্ষার পারদ যত কম থাকবে, তত বেশি সুখী হবেন। যত বেশি চাইবেন অন্তর তত বেশি বিষিয়ে থাকবে। অতিরিক্ত যা কিছু তার সবকিছুই বিষ-আসক্তি। একটা সুন্দর-সুখী জীবনের জন্য দু’জনার একজন হয়ে বাঁচা চেষ্টাটুকুই আসল এবং যথেষ্ট। সঙ্গের সঙ্গীর পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিলে সেখানে অসুখ আনবে এমন সাধ্য কার? তখন বারবার মুখ দেখতে ইচ্ছা করবে, কথা বলতে ভালো লাগবে, ঘুরতে যেতে মন চাইবে। আমরা জীবনভর বোধহয় একটি সুখী জীবনের স্বপ্ন দেখি!
রাজু আহমেদ।
কলাম লেখক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।