মানুষকে সম্মান দিলে সম্মান কমে না বরং বড়ে। যারা দিনকে সুন্দর করে, কাজকে সহজ করে, চলার পথ মসৃণ করে তাদেরকে কেন জানি সম্মান দিতে চাই না। এই শহরের আবর্জনা তিনদিন যদি স্তূপীকৃত রাখা হয় তবে এই শহর আর বাসযোগ্য থাকবে? অথচ ক্লিনারের সম্মান নাই। মজুরের প্রতি দরদ নাই। রিকশাওয়ালাদের সাথে যা খুশি তাই ব্যবহার করি। অফিস যারা গুছিয়ে রাখে তারা একটু ভুল করলেই তুই-তুকারির গালিতে বন্যা বইয়ে দেই। যে রুম পরিস্কার করলো, যিনি রান্না করে খাওয়ালেন, জুতা চকচকে করে দিলেন, পরিধেয় বস্ত্রের ভাঁজ দূর করে দিলেন, মানুষ হিসেবে তাদেরকে কতটুকু সম্মান করি? অনেকেই করি না! অন্য কেউ করুক সেটাও ভালোচোখে দেখি না বরং নিরুৎসাহিত করি! আমার মত পশু হ-আচরণে এমনটাই প্রকাশ করি!
প্রশ্ন উঠবে, তারা যে কাজ করে তার বিনিময়ে তাদের পারিশ্রমি দেই না? খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন। তবে অর্থের বিনিময় দিয়ে কারো সাথে খারাপ আচরণ করা মানবীয় সৌন্দর্য নয়। সিনিয়র-জুনিয়র ভেদ ভুলে গিয়ে কাউকে হেয় করা শোভনীয় নয়। মনে রাখা দরকার, সমপর্যায়ের কিংবা উচ্চশ্রেণির কেউ আপনাকে সেভাবে সম্মান করবে না, ভালোবাসায় রাখে না, যতোখানি পেতে পারেন আপনার হেল্পিংহ্যান্ডগুলো থেকে। সেটা অর্জন করতে হবে। আমাদের অনুপস্থিতেও যেনো বলে, অমুকে খুব ভালো মানুষ ছিলেন। যদি এটা অর্জন করা যায় তবে এই একজীবনে আর বেশিকিছু দরকার নাই! নিজেকে তখন ভালো মানুষ ভাবতে পারেন। তবে অধীনস্থরা যদি পেছনে হালি হালি গালি দেয় তবে আপনি কেমন মানুষ জানি না!
‘সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই’-এটাই চিরন্তন সত্য। ক্ষণিকের জন্য পেশা-মর্যাদায় ভিন্নতর অবস্থানে থাকি, ভিন্ন কাজ করি, আলাদা কথা বলি কিন্তু দিনের শেষে আমরা মানুষ বহি কিছুই না। আমি কি খুব উচ্চ কেউ? আরও উচ্চতরের চোখে, উচ্চতরেরও উচ্চতরের চোখে, সর্বোপরি স্রষ্টার চোখে আমি কে? ধূলিকণা! ছদরুদ্দী-বদরুদ্দী! কাজেই হিংসা-দেমাগের কিছু নাই। অধীনদের ছাড়া একটি কাজও সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না। একজন কৃষককে কতোভাবে অপমান করা হয়! অথচ এক সিজন যদি লাঙন তুলে রাখেন, শ্রম বন্ধ রাখে আপনার-আমার কী হাল হবে তা একবারও ভেবেছি? জীবনে বড্ড বেহাল নেমে আসবে। লাতাভাজাও জুটবে না!
আমরা মানুষের জন্য তেমন কিছুই করতে পারি না, সম্মান দেয়া ছাড়া। সব মানুষকে সম্মান দেয়া উচিত। এটাই তো আমাদের কাজ হবে। সম্মান না দিয়ে সম্মান পাওয়া যায় না। একজন মজুরের ছেলের কাছে মজুর বাবা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। আমরা মানুষকে কথায় কথায় গালি দেই, চড়-থাপ্পর মারি, দুর্বলতায় আঘাত করি-এসবের চেয়ে গর্হিত কাজ, জঘন্য কাজ, নগন্য কাজ আর একটিও হয় না। কাজ আদায়ের জন্য কি গালাগাল করতে হয়? গুনীজনের মুখে গালি থাকে না। ভালোবেসেই জয় করা যায় বিশ্ব। যে কাজ গালি দিয়ে আদায় করতে হয় সে কাজ মানব কল্যাণের জন্য দরকার নাই। গালি যার উদ্দেশ্য দেয়া হয়, অসম্মান যাকে করা হয় এসব তার জাত চেনায় না বরং যে অসম্মান করে, যে মুখ খারাপ করে তার নীচতা জানান দেয়! কথাই যে মানুষের জ্ঞানের মাপকাঠি! আচরণ পরিবারিক শিক্ষার প্রকাশ! আমি কী এবং কে-সেটা আমার কথা, কাজ এবং আচরণের দ্বারা আমাকেই প্রমাণ করতে হবে।
রাজু আহমেদ।
কলামিস্ট।
raju69alive@[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।