আশরাফুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: আমের রাজধানী নামে খ্যাত কানসাটসহ শিবগঞ্জের বিভিন্ন আমের বাজারে আমের ওজন নিয়ে চলছে নৈরাজ্যের উৎসব। প্রতি মনে ধরা হচ্ছে ৫৪/৫৫ কেজি আম। প্রতিনিয়ত আম ব্যবসায়ী ও আম ব্যবসায়ীরা প্রতারিত হচ্ছে। প্রশাসনের ভাষ্য হলো এটি প্রথায় পরিণত হয়েছে। তাই এটি রোধ সহজ নয়। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে। সরেজমিনে কানসাট আম বাজারে কথা হয় শ্যামপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের আম ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমানের সাথে। তিনি জানান, আম বিক্রি করতে এসে আড়তদাররা যা করছে তা একেবারে ডাকাতির সামিল। বিভিন্ন কৌশলে ওজনে মণ প্রতি ৫৪/ ৫৫ কেজি করে নিচ্ছে। তার উপর আবার কাঁটাওয়ালা(যারা ওজন করে) মণ প্রতি দুইটা করে, মহরাল (যারা লিখে রাখে) মণ প্রতি দুইটা করে ও শ্রমিকেরা মণ প্রতি দুইটা করে নিচ্ছে। এ ছয়টি আমের ওজন প্রায় আড়াই থেকে তিন কেজি। শুধু তাই নয়, রাস্তায় কয়েক স্থানে জোর করে ডালি হতে একটি বা দুইটি করে আম তুলে নিচ্ছে, হিজড়া, ডোম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নামে। সব মিলিয়ে কানসাট বাজারে এক মণ আম বিক্রি করতে হলে প্রকৃত-ভাবে আমের প্রয়োজন হচ্ছে প্রায় ৬০ কেজি। দিতে হচ্ছে। একই কথা বলেন, কানসাট এলাকার আনারুল ইসলাম, কানসাট কলেজ পাড়ার একরামুল হক, শাহাবাজপুর নয়াগা গ্রামের হুমায়ুন আলী, পারদিলালপুর গ্রামের দুরুল হক মুসলিপুর গ্রামের একরামুল হক, সোনামসজিদ এলাকার ইসমাইল হক, কানসাট কলাবাড়ি গ্রামের সাইদুল ইসলাম মুসলিমপুর গ্রামের বকুল ইসলাম, বানী ইসরাইল হক, মনাকষা ইউনিয়নের শুকুদ্দি মন্ডলসহ শত শত আম ব্যবসায়ী ও আম চাষিদের একই অভিযোগ। বিশিষ্ট আম ব্যবসায়ী ও আম উদ্যোক্তা ইসমাইল হক শামীম খান বলেন, ওজনের ক্ষেত্রে যে আম বেশী নেয়া হচ্ছে তা মূলত চাষিদের লোকসান হচ্ছে। কারণ কোন আম ব্যবসায়ী আম ক্রয় করার সময় ওজনে ৫৪/৫৫ কেজি নিচ্ছে। আবার আম ব্যবসায়ী ও আম চাষিরা কানসাট আম বাজারে ঢুকার আগেই ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা রাস্তাতেই আম ক্রয় করে নিচ্ছে। তিনি বলেন আম চাষিরা একমন আম উৎপাদন করতে প্যাকেট ছাড়াই ৪০ কেজিতে মণ ধরে প্রায় ৫শ টাকা খরচ করে। সে আম বিক্রি করার সময় যদি ৫৫ কেজিতে মণ ধরে বিক্রি করতে হয় তাহলে তাদের খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৬০০ টাকা। প্যাকেট করা আম উৎপাদনে খরচ আরও বেশী। ৫৫ কেজি আম উৎপাদনে খরচ হবে প্রায় ১৪শ টাকা। কাজেই ওজনের ক্ষেত্রে একটা সমাধান হওয়া উচিত। আমরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভায় আমরা কয়েকবার দাবী করেছি। তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। কানসাট আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক টিপু বলেন, ওজনে বেশী নেয়া আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বড় ব্যাপারীর কাছে। তারা আম ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে বাধ্য করে ৫৪/৫৫ কেজিতে মণ ধরে আম নিচ্ছে। এখানে আম আড়তদারদের কোন কিছু করার নেই। তবে আমাদেরও দাবী এ প্রতারণা থেকে আম ব্যবসায়ী ও আম চাষিদের উদ্ধার করা হোক। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম জানান, আম চাষি ও আম ব্যবসায়ীরা ওজনের ক্ষেত্রে প্রতারণা শিকার হচ্ছে। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কিছু করার নেই। এটি করবে স্থানীয় সরকার প্রশাসন। তবে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভাতে বার বার তুলে ধরেছি। আমি আবারো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো সুষ্ঠু সমাধানের জন্য। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত বলেন, এটি শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় নয়, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলাতেও ৫৪/৫৫ কেজিতে মণ ধরে আম কেনা বেচা হচ্ছে। শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এটি রোধ করা হলে সমস্ত ব্যাপারী অন্য জেলাতে গিয়ে আম ক্রয় করবে। ফলে এখানকার আম ব্যবসায়ী ও আম চাষিরা খুব জোরে হোঁচট খাবে। তবে এটি নিয়ে জেলা ও আন্ত জেলা পর্যায়ে আলোচনা করে সমাধান হতে পারে। আমি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা: সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বলেন, আম চাষি ও আম ব্যবসায়ীদেরকে প্রতারণা হাত থেকে রক্ষা করতে আমরা দ্রুত বিভাগীয় কমিশনারের সাথে আলোচনা করে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসকদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে ৪০ কেজিতেই মণ ধরে আম কেনা বেচা করার ব্যবস্থা নিব। তিনি আরও বলেন প্রয়োজনে এ বিষয় নিয়ে সংসদেও কথা বলবো।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।