ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৩তম সীমান্ত সম্মেলন ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান, বিএএম, এনডিসি, পিএসসি এর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং বিএসএফ মহাপরিচালক ড. সুজয় লাল থাওসেন, আইপিএস এর নেতৃত্বে ভারতের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা ও আহতের ঘটনা জোরালো ভাবে তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বিএসএফকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনার জন্য আহ্বান জানান। এ সময় বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। সীমান্তে উভয়পক্ষ পেশাদারিত্বের সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে সম্মত হয়। তন্মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে রাত্রিকালীন যৌথ টহল বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখা, আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উভয়পক্ষ সম্মত হয়। বৈঠকে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ যেমন- মাদক পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, স্বর্ণ, অস্ত্র, জাল মুদ্রার নোট প্রভৃতি চোরাচালান রোধে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর উভয় পক্ষ হতে গুরুত্বারোপ করা হয়। এ সময় উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে উভয়পক্ষ তথ্য বিনিময় করে। এবিষয়ে ভবিষ্যতে অপরাধীদের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে মাঠ পর্যায়ে বিনিময়েও উভয়পক্ষ সম্মত হয়। সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম রোধকল্পে সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যাপারে উভয় পক্ষ গুরুত্বারোপ করে। এছাড়া ভারতে বসবাসকারী বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ভারত হতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধে বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি উভয় দেশের দালাল চক্র দমনে পরস্পরকে সহায়তা প্রদানে উভয়পক্ষ সম্মত হয়। এ সময় বিএসএফ মহাপরিচালক সন্দেহভাজন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিজিবি ও বাংলাদেশের অন্যান্য বাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। এ প্রেক্ষিতে বিজিবি মহাপরিচালক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ কখনও তার ভূমি অন্য কোনো রাষ্ট্রের সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে ব্যবহারের সুযোগ দেয় না; ভবিষ্যতেও দেবে না। বৈঠকে উভয়পক্ষ, দুই দেশের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সুবিধা ব্যবহার করে সীমান্তে সংগঠিত অপরাধ রোধে সংশ্লিষ্ট দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে একমত হয়। এ ছাড়া পূর্বানুমতি ছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু না করার ব্যাপারে উভয়পক্ষ পারস্পরিক সম্মতি জ্ঞাপন করে এবং সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজ জয়েন্ট ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে সম্মত হয়। উল্লেখ্য, গত ১১ জুন ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিস্থ বিএসএফ চাওলা ক্যাম্পে এ সীমান্ত সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ৪ দিনব্যাপী অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা শেষে ১৪ জুন যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সম্মেলনটি শেষ হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।