ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদীয় দলনেতা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁর দল একজন অসাধারণ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছে’ বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মোঃ সাহাবুদ্দিন মাঠের রাজনীতি করেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছেন। যিনি মুক্তিযোদ্ধা, যার মধ্যে ভদ্রতা, নম্রতা একইসাথে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সব কিছুরই সমন্বয় আছে। আর এ বিষয়ে বিএনপির অনাগ্রহের কারণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের অশ্রদ্ধা।’ রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রস্তাবিত ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্মুদ সমর্থিত মোঃ সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র এ দিন নির্বাচন কমিশনে দাখিলের পর দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ-বিএসপি নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে মিলিত হন তথ্যমন্ত্রী। সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, বিএসপি সভাপতি মোঃ মোজাফফর হোসেন পল্টু ও সাধারণ সম্পাদক এম জি কিবরিয়া চৌধুরী বৈঠকে বক্তব্য দেন। ‘অ্যাডভোকেট মোঃ সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন’ উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাবনা টাউন হল ময়দানে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারীদের অন্যতম ছিলেন মোঃ সাহাবুদ্দিন। ১৯৬৭-৬৮ সালে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৯-৭০ সালে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি, ১৯৭০-৭৩ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪-৭৫ সালে জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন, দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে মিছিল করেছিলেন এবং সেই অপরাধে ২০ আগস্ট অ্যাডভোকেট সাহাবুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং ৩ বছরের বেশি সময় তিনি কারাগারে অবরুদ্ধ ছিলেন। কারামুক্তির পর তিনি ১৯৮০ সালে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।’ ‘এরপর অ্যাডভোকেট সাহাবুদ্দিন বিসিএস জুডিসিয়াল ক্যাডারে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫-৯৬ সালে তিনি জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব নির্বাচিত হন’ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিনিয়র জজ হিসেবে অবসরের পর তাঁকে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি দমন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেন এবং সেই দায়িত্ব পালনকালে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ যে অসত্য সেটি তুলে ধরতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আপনারা জানেন, পদ্মা সেতুতে যে কোনো দুর্নীতি হয়নি সেটি কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।’ ‘বিএনপি নেতাদের রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই’ এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহ্মুদ বলেন, ‘বিএনপির তো দেশটা নিয়েই কোনো আগ্রহ নেই। তাদের সমস্ত আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে তারেক রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া। দেখুন কীভাবে শাস্তিপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে তারা তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানিয়েছে এবং বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখে! আমরাও চাই তিনি ফিরে আসুক, শাস্তির মুখোমুখি হোক, বিচার কাজের মুখোমুখি হোক। আর বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য -এ নিয়ে তাদের সমস্ত আগ্রহ। জনগণ বা দেশ নিয়ে তো তাদের কোনো আগ্রহ নেই।’ মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আসলে গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি অশ্রদ্ধাশীল বিধায় বিএনপি এ ধরনের কথা বলতে পারে যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। এর অর্থ হচ্ছে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই।’ বিএনপির পদযাত্রায় নানা সংঘর্ষ নিয়ে প্রশ্নে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহ্মুদ বলেন, ‘বিএনপি তো সারা দেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে দেওয়া এবং বিশৃঙ্খলা তৈরির অসৎ উদ্দেশ্যেই ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি নিয়েছিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় ছিলো, শান্তি সমাবেশ করেছে, সে জন্য তারা সারা দেশে যেভাবে বিশৃঙ্খলা করতে চেয়েছিল তা পারেনি। এরপরও বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র উঁচিয়ে তাদের অগ্নিসন্ত্রাসীরা সেই সব সমাবেশে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ আর তাদেরকে ২০১৩-১৪-১৫ সালের মতো সেই পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ দেবে না।’ এর আগে বিএসপির সাথে বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার গণমাধ্যমবান্ধব সরকার। শেখ হাসিনা গণমাধ্যমবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। সে কারণেই বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। সাড়ে চারশত থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১২শত ৬০টি দৈনিক পত্রিকা হয়েছে, অনলাইন গণমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে, একইসাথে টেলিভিশনের সংখ্যা ১০টি থেকে এখন ৩৬টি সম্প্রচারে আছে। এফএম এবং কমিউনিটি রেডিওগুলোও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে লাইসেন্স পেয়েছে।’ সভায় বিএসপি নেতৃবৃন্দ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ক্রোড়পত্রগুলোর বকেয়া বিল পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া, জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় দৈনিকে নীতিমালা অনুযায়ী ক্রোড়পত্র প্রদান, মিডিয়া তালিকাভুক্ত সংবাদপত্রসমূহে সুষ্ঠু বিজ্ঞাপন বণ্টন ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন কমিটিতে বিএসপি প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করাসহ ১৫টি দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করেন। মন্ত্রী দাবি-দাওয়াগুলো পর্যালোচনার আশ্বাস দেন। বিএসপি’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক রফিক উল্লাহ সিকদার, মো. আতিকুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মঞ্জুর বারী মঞ্জু, চৌধুরী আতাউর রহমান, এবিএম সেলিম আহমেদ, কাজী আনোয়ার আমাল, ফরিদ আহাম্মেদ বাঙালি, কোষাধ্যক্ষ মফিজুর রহমান খান (বাবু), সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন, দপ্তর ও কল্যাণ সম্পাদক মোরশেদ মজুমদার এবং সদস্যদের মধ্যে এম এ জলিল, অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, মোহাম্মদ আরেফিন, এডভোকেট মনোয়ার হোসেন, রুমাজ্জল হোসেন রুবেল, রবিউল ইসলাম রুবেল, মো: তাজুল ইসলাম, এম এ এস ইমন, নুরুন নাহার রীতা ও অশোক ধর এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।