All Menu

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংগৃহীত চিত্র।

ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“আজ শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। আমি শহিদ বুদ্ধিজীবীসহ সকল শহিদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাঁদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করছি এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৩ বছরের পাকিস্তানি বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দেশের আপামর জনসাধারণকে সংগঠিত করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় পাকিস্তানের দোসর জামাতসহ ধর্মান্ধ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করে পাক হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করার পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ লুটতরাজ করে। বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে তারা দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ দেশের মেধাবী সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা ও গুম করে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লাহ কায়সার, গিয়াসউদ্দিন, ডা. ফজলে রাব্বি, আবদুল আলীম চৌধুরী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতাসহ আরো অনেকে। স্বাধীনতা বিরোধীরা এই পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পরাজয়ের জঘন্যতম প্রতিশোধ নেয়। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করাই ছিল এ হত্যাযজ্ঞের মূল উদ্দেশ্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের এই পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তারা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করে। সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিয়ে দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মুক্তমনা, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ, সংখ্যালঘুদের হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন চালায়। এই সন্ত্রাসী-জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে দেশব্যাপী আগুন সন্ত্রাস চালায়, মানুষ পুড়িয়ে মারে এবং পরিকল্পিত নাশকতা চালায়। এখনও নানাভাবে তারা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী মানবতাবিরোধী- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছে। বিচার চলমান রয়েছে এবং অনেকগুলো বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। এসব রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পেয়েছে। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। এই কুখ্যাত মানবতাবিরোধীদের যারা লালন-পালন ও রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদেরও একদিন বিচার হবে, ইনশাল্লাহ। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ বাঙালি জাতি চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমি দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘৭১-এর ঘাতক, মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী জামাত-মৌলবাদীচক্র এবং গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তির যে কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বপালনের আহ্বান জানাচ্ছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক ।”

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top